ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যাপক হামলা: এফ-১৬ বিধ্বস্ত, পাইলট নিহত

- Update Time : ০৬:৫৬:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
- / ২৮১ Time View
রাশিয়ার ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে ইউক্রেনের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতের এই ঘটনায় বিমানের পাইলট নিহত হয়েছেন। আজ রোববার ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এটি ২০২২ সালে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর ইউক্রেনের হারানো তৃতীয় এফ-১৬ যুদ্ধবিমান । ইউক্রেনের বিমানবাহিনী টেলিগ্রামে জানিয়েছে, পাইলট তার যুদ্ধবিমানের সমস্ত অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার সাতটি বিমান হামলা প্রতিহত করেছিলেন। শেষ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সময় তার বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং উচ্চতা হারাতে শুরু করে। পাইলট বিমানটি জনবসতি থেকে দূরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিমান থেকে বের হতে পারেননি ।
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পাইলট তার সব ধরনের বিমান অস্ত্র ব্যবহার করে সাতটি লক্ষ্যবস্তুতে গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করেছেন। শেষটি গুলি করার সময় তার বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও উচ্চতা হারাতে শুরু করে” । ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া রাতভর ইউক্রেনে ৪৭৭টি ড্রোন ও বিভিন্ন ধরনের ৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে ইউক্রেনীয় বাহিনী ২১১টি ড্রোন ও ৩৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া আরও ২৫৫টি ড্রোন বা সিমুলেটরের পথ পরিবর্তন করে দিয়েছে । ইউক্রেনীয় বাহিনী দেশের ছয়টি স্থানে রাশিয়ার ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্রের সরাসরি আঘাত হানার তথ্য রেকর্ড করেছে ।
মধ্য চেরকাসি অঞ্চলের গভর্নর ইহোর তাবুরেটস টেলিগ্রামে একটি পোস্টে বলেছেন, রুশ বাহিনীর হামলায় এক শিশুসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, হামলায় তিনটি বহুতল ভবন ও একটি কলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণ ইউক্রেনের মাইকোলাইভ ও মধ্য ডনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের পশ্চিমে অবস্থিত লভিভ অঞ্চলের গভর্নর বলেছেন, রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে । ইউক্রেনীয় এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটির পাইলটের আত্মত্যাগ দেশজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাইলট শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিমানটি জনবসতি থেকে দূরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, যা তার পেশাদারিত্ব ও মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় দেয় । এই হামলার আগের সপ্তাহে ইউক্রেন রাশিয়ার চারটি বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল, যেখানে ৪০টির বেশি রুশ বোমারু বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছিল । এর জবাবে রাশিয়া বড় আকারের হামলা চালাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এখন ঠিক সেই মুহূর্ত যখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং বিশ্বের সকলেই একসঙ্গে রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে” । ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে রাশিয়া ধীরে ধীরে দনবাস অঞ্চলে অগ্রসর হচ্ছে। তবে ইউক্রেনের সাম্প্রতিক ড্রোন হামলাগুলো দেখিয়েছে যে তারা এখনও প্রতিরোধ ক্ষমতা ধরে রেখেছে । এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইউক্রেনের হিসেবে শতাধিক নিহত হয়েছে এবং রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অজানা । এই সংঘর্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ রাশিয়ার হামলার নিন্দা করে একটি প্রস্তাব গৃহীত করেছে এবং সম্পূর্ণভাবে হামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে । ইউক্রেন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে এবং গত সোমবার ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনায় তাদের সর্বশেষ প্রস্তাব পেশ করেছে।