০৮:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের বিএনপি-জামাতের মিছিলে অনুপ্রবেশ: একটি রাজনৈতিক কৌশল নাকি বিভেদের ষড়যন্ত্র?

Reporter Name
  • Update Time : ১০:৩৩:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৩৫৩ Time View

জয়পুরহাটের কালাই থানায় বিএনপির মিটিং-মিছিলে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের অংশগ্রহণের অভিযোগ

সম্প্রতি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাটের কালাই থানায় বিএনপির মিটিং ও মিছিলে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির তিনজন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে কার মিছিল বড়, কার সভায় জনসমাগম বেশি। এই প্রতিযোগিতার জের ধরে কেউ কেউ আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সমর্থকদের নিজেদের পক্ষে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার কেউ কেউ দাবি করছেন, আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী টাকার বিনিময়ে বিএনপির মিছিলে অংশ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে নিজেদের নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বললে তারা স্বীকার করেন, গত কয়েক দিন ধরে এমন ঘটনা তাদের নজরে এসেছে। একজন জেলা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, কিছু অচেনা মুখ আমাদের সমাবেশে অংশ নিচ্ছে। পরে জানা গেছে, তারা আওয়ামী লীগ বা যুবলীগের সাথে যুক্ত। এটা হয়তো গোয়েন্দাগিরির অংশ অথবা আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা। তিনি আরও জানান, দলীয় উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির মিটিং-মিছিলে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের অনুপ্রবেশের পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:

 

  1. তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দাগিরি: আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী বিএনপির পরিকল্পনা ও কৌশল সম্পর্কে আগাম তথ্য পেতে এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন।
  2. বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা: বিএনপির মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে দলীয় ঐক্য নষ্ট করার কৌশল হিসেবে এটি কাজ করতে পারে।
  3. বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ নেওয়া: বিএনপির বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকায়, কোনো প্রার্থী জনসমাগম বাড়াতে অন্য দলের সমর্থকদের টাকার বিনিময়ে ভিড়ে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

বিএনপি-জামাতের নেতৃত্ব ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি করেছেন। তাদের নির্দেশনা হলো

মিছিল-মিটিংয়ে অচেনা ব্যক্তিদের প্রবেশে কঠোর নজরদারি রাখা।

দলের নিম্নস্তরের নেতাকর্মীদের সচেতন করা যাতে তারা অর্থ বা অন্য কোনো প্রলোভনে পা না দেয়।

সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বের করে দেওয়া।

স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যদি এই ঘটনা সত্য হয়, তাহলে এটি রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে। বিএনপি-জামাত ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলে আসছে । অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতারা বিএনপি-জামাতকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য দায়ী করেন ।

এই ঘটনা রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও তীব্র করতে পারে। বিএনপি-জামাত যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে দলীয় কর্মসূচিতে আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ-যুবলীগ যদি সত্যিই এমন কৌশল অবলম্বন করে থাকেন, তাহলে তা রাজনৈতিক নৈতিকতার প্রশ্নেও দাঁড় করাবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

About Author Information

আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের বিএনপি-জামাতের মিছিলে অনুপ্রবেশ: একটি রাজনৈতিক কৌশল নাকি বিভেদের ষড়যন্ত্র?

Update Time : ১০:৩৩:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫

জয়পুরহাটের কালাই থানায় বিএনপির মিটিং-মিছিলে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের অংশগ্রহণের অভিযোগ

সম্প্রতি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাটের কালাই থানায় বিএনপির মিটিং ও মিছিলে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির তিনজন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে কার মিছিল বড়, কার সভায় জনসমাগম বেশি। এই প্রতিযোগিতার জের ধরে কেউ কেউ আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সমর্থকদের নিজেদের পক্ষে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার কেউ কেউ দাবি করছেন, আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী টাকার বিনিময়ে বিএনপির মিছিলে অংশ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে নিজেদের নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বললে তারা স্বীকার করেন, গত কয়েক দিন ধরে এমন ঘটনা তাদের নজরে এসেছে। একজন জেলা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, কিছু অচেনা মুখ আমাদের সমাবেশে অংশ নিচ্ছে। পরে জানা গেছে, তারা আওয়ামী লীগ বা যুবলীগের সাথে যুক্ত। এটা হয়তো গোয়েন্দাগিরির অংশ অথবা আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা। তিনি আরও জানান, দলীয় উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির মিটিং-মিছিলে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের অনুপ্রবেশের পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:

 

  1. তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দাগিরি: আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী বিএনপির পরিকল্পনা ও কৌশল সম্পর্কে আগাম তথ্য পেতে এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন।
  2. বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা: বিএনপির মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে দলীয় ঐক্য নষ্ট করার কৌশল হিসেবে এটি কাজ করতে পারে।
  3. বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ নেওয়া: বিএনপির বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকায়, কোনো প্রার্থী জনসমাগম বাড়াতে অন্য দলের সমর্থকদের টাকার বিনিময়ে ভিড়ে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

বিএনপি-জামাতের নেতৃত্ব ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি করেছেন। তাদের নির্দেশনা হলো

মিছিল-মিটিংয়ে অচেনা ব্যক্তিদের প্রবেশে কঠোর নজরদারি রাখা।

দলের নিম্নস্তরের নেতাকর্মীদের সচেতন করা যাতে তারা অর্থ বা অন্য কোনো প্রলোভনে পা না দেয়।

সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বের করে দেওয়া।

স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যদি এই ঘটনা সত্য হয়, তাহলে এটি রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে। বিএনপি-জামাত ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলে আসছে । অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতারা বিএনপি-জামাতকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য দায়ী করেন ।

এই ঘটনা রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও তীব্র করতে পারে। বিএনপি-জামাত যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে দলীয় কর্মসূচিতে আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ-যুবলীগ যদি সত্যিই এমন কৌশল অবলম্বন করে থাকেন, তাহলে তা রাজনৈতিক নৈতিকতার প্রশ্নেও দাঁড় করাবে।