বাংলাদেশ থিয়েটারের চার দশক স্পর্শ উৎসব ২০২৫ : জাতীয় নাট্যশালায় বর্ণিল আয়োজনে অনুষ্ঠিত উৎসব
- Update Time : ০৯:৫৬:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
- / ১১০ Time View
জাতীয় নাট্যশালা, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, সেগুনবাগিচায় আজ অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ থিয়েটারের ‘চার দশক স্পর্শ উৎসব ২০২৫’। দীর্ঘ চার দশকের যাত্রা উদযাপনকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই উৎসবে দেশের নাট্যাঙ্গন, সংস্কৃতি অঙ্গন, গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে হয়ে ওঠে একটি মিলনমেলা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেগম সেলিমা রহমান, বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য। চার দশকের এ ঐতিহাসিক পথচলার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সংস্কৃতি, নাট্যচর্চা ও মঞ্চায়ন আন্দোলনে বাংলাদেশ থিয়েটারের অবদান অসাধারণ। নাটক শুধু বিনোদন নয়, সমাজকে মানবিক, ন্যায়পরায়ণ ও সচেতন করে তোলার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। চার দশকের এই যাত্রা আমাদের সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়কে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশের সংস্কৃতিচর্চা এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি শিল্পী, সংস্থা ও দর্শকদের সমন্বিত ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। থিয়েটারের মতো সংগঠনগুলো এ দেশের শিল্প-সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি অভিনন্দন জানান।

উৎসবের বিশেষ অতিথি ছিলেন এমানুল হক, একুশে পদকপ্রাপ্ত ও শিল্পকলা পদকপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য নৃত্যগুরু। তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেন, “নাটক ও নৃত্য বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রাণ। চার দশকের মঞ্চচর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশ থিয়েটার তরুণ প্রজন্মকে শিল্প-চর্চায় উদ্বুদ্ধ করছে, যা অত্যন্ত আনন্দের।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ছটকু আহমেদ, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক। তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও নাটকের সমন্বিত অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে বলেন, থিয়েটারের শক্ত শিল্পভিত্তি চলচ্চিত্র শিল্পকেও সমৃদ্ধ করে। বাংলাদেশের গল্প, সংস্কৃতি ও সংগ্রামকে তুলে ধরতে নাট্যকর্মীরা যে শ্রম দিয়ে আসছেন তা আরও বিস্তৃত হওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে অংশ নেন রেজাউদ্দৌলা চৌধুরী, লেখক, গবেষক ও বরেণ্য সাংস্কৃতিক সংগঠক। তিনি বাংলাদেশ থিয়েটারের চার দশকের সংগ্রাম, সাফল্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তাঁদের অবদানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাঁর মতে, একটি সংগঠনের চার দশকের ধারাবাহিকতা নিজেই একটি ইতিহাস, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।

বক্তব্য দেন শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, দেশবরেণ্য গীতিকবি ও কলামিস্ট। তিনি সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলনে থিয়েটারকর্মীদের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, “মঞ্চই সেই স্থান যেখানে মানুষ নিজের কথা, সমাজের কথা এবং সত্যের কথা বলার সাহস পায়।”
বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাব্যবস্থাপক নুরুল আজম পবন অনুষ্ঠানে বলেন, “টেলিভিশনের পাশাপাশি থিয়েটার মাধ্যমটি সমাজকে নান্দনিকভাবে আলোকিত করে। বাংলাদেশ থিয়েটারের মতো সংগঠনগুলো শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রকে ধারাবাহিকভাবে সমৃদ্ধ করে আসছে।”
এনিগমা মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী ফাহমিদুল ইসলাম শান্তনু বলেন, থিয়েটার হচ্ছে সৃষ্টিশীলতার বিশাল ক্ষেত্র। ডিজিটাল যুগে নাট্যচর্চা আরও প্রসারিত করার সুযোগ রয়েছে, এবং বাংলাদেশ থিয়েটারের সৃজনশীলতা তরুণ প্রজন্মের কাছে নতুন অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়াবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ থিয়েটারের সভাপতি আব্দুল আজিজ। চার দশকের ইতিহাস, সাফল্য, নাট্যকর্মীদের ত্যাগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থিয়েটার শুধু নাটক মঞ্চায়ন করে না, মানবিক সমাজ গঠনের জন্যও কাজ করে। আমরা আগামী প্রজন্মকে থিয়েটারের প্রতি আরও উৎসাহিত করতে ভবিষ্যতেও কাজ করে যাব।”
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম। তিনি বাংলাদেশ থিয়েটারের যাত্রাপথ, বিভিন্ন সময়কার কর্মকাণ্ড, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবদান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সংগঠনটি চার দশক ধরে দেশজ নাট্যচর্চার ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে, যা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নয়, বরং দেশের সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রতিচ্ছবি।
বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে নাট্যশালার মিলনায়তন ছিল শিল্পী, নাট্যকর্মী, সংস্কৃতিমনা মানুষ ও যুবসমাজের পদচারণায় মুখর। চার দশকের পথচলার এই মুহূর্ত তাই বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের জন্য এক নতুন অনুপ্রেরণা।















